ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর সাইপ্রাসে ইসরায়েলিদের জমি দখল: নতুন ‘ফিলিস্তিন’ আতঙ্কে দ্বীপ রাষ্ট্র
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপের নিপীড়িত ইহুদিদের জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত সাইপ্রাসে আবারও ইসরায়েলিদের ঢল নেমেছে। তবে এবার তারা শুধু আশ্রয়ের জন্য নয়, বরং জমি কিনে, বসতঘর তুলে একটি স্থায়ী ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গড়ার প্রয়াসে নেমেছেন। এতে করে দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে ছড়িয়ে পড়েছে এক নতুন আতঙ্ক—সাইপ্রাস কি তবে ধীরে ধীরে আরেকটি ‘ফিলিস্তিনে’ রূপ নিচ্ছে?
ইসরায়েলিদের জমি কেনার তথ্য ও এলাকায় উপস্থিতি
সাইপ্রাস মেইল ও অন্যান্য সূত্র অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত শুধুমাত্র লারনাকা এলাকায় ইসরায়েলিরা ১,৪০৬টি সম্পত্তি কিনেছেন এবং ৪৮১টি দলিল সম্পন্ন হয়েছে। লিমাসোলেও রয়েছে একই চিত্র—সেখানে কেনা হয়েছে ১,১৫৪টি সম্পত্তি, যার মধ্যে ৫১১টি ইতোমধ্যে নিবন্ধিত।
এই ক্রয়প্রক্রিয়া সাধারণ বিদেশি নাগরিকদের মতো নয়। বিশেষত সেনাঘাঁটির আশপাশের এলাকা, যেমন লারনাকা ও লিমাসোলে গেটেড কমিউনিটি, জায়নবাদী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সিনাগগ গড়ে তোলা হয়েছে—যেখানে স্থানীয়দের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া
সাইপ্রাসের বামপন্থি প্রধান দল আকেল পার্টি এ ঘটনাকে ‘ভূমি দখলের সূক্ষ্ম কৌশল’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, “আমরা এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে নিজেদের জমিও আমাদের হাতে থাকবে না।” দলটির মহাসচিব স্তেফানো বলেন, “ইসরায়েলিরা ‘গোল্ডেন ভিসা’ প্রোগ্রামের সুযোগ নিয়ে কৌশলে কৌশলে দেশটির কৌশলগত অঞ্চলগুলোতে আধিপত্য তৈরি করছে।”
এ নিয়ে সংসদে দুইটি বিলও উত্থাপন করেছে দলটি, যাতে বিদেশি নাগরিকদের জমি কেনার ওপর কড়াকড়ি আরোপের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক ও ভৌগোলিক উদ্বেগ
যদিও যুক্তরাজ্য ও রাশিয়ার নাগরিকরাও সাইপ্রাসে জমি কিনেছেন, তবে ইসরায়েলিদের ভূমি অধিগ্রহণের ধরন এবং অবস্থান নির্বাচন স্থানীয়দের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। অনেক পর্যবেক্ষক আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েল ধীরে ধীরে এখানে আধা-স্বায়ত্তশাসিত জায়নবাদী অঞ্চল তৈরি করে ফেলতে পারে, যা স্থানীয় জনগণের জন্য ভবিষ্যতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি তৈরি করবে।
স্তেফানোর ভাষায়, “লিমাসোল বা লারনাকায় গিয়ে মানুষ নিজেরাই আপনাকে বলে দেবে কোন এলাকাগুলোয় বাইরের কাউকে যেতে দেওয়া হয় না।”
ইতিহাস কি পুনরাবৃত্ত হচ্ছে?
ইসরায়েলিদের এমন গোপন ও ধারাবাহিক পদক্ষেপ অনেকের মনে ভয় জাগিয়েছে—এটি কি সেই পুরোনো ‘প্যালেস্টাইন প্রক্রিয়ার’ই পুনরাবৃত্তি? এক স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কীভাবে আরেক গোষ্ঠী নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তার অজুহাতে এমন সাংগঠনিক বসতি তৈরি করছে?
উপসংহার
সাইপ্রাসের এই পরিস্থিতি আর সাধারণ রিয়েল এস্টেট লেনদেন নয়। এটি এক জটিল রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক সংকটের পূর্বাভাস হতে পারে। যদি সময়মতো যথাযথ আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, সাইপ্রাস হয়তো অদূর ভবিষ্যতে একটি ‘নতুন ফিলিস্তিন সংকটে’ পতিত হবে।
ট্যাগস (Tags):
#Cyprus #IsraelSettlement #NewPalestine #Zionism #GoldenVisa #AkelParty #MiddleEastConflict #CyprusNews #IsraelIranTension
সাইপ্রাসে ইসরায়েলিদের জমি কেনা নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন (FAQ)
🔹 ইসরায়েলিরা কেন সাইপ্রাসে জমি কিনছে?
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এবং মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা হুমকির কারণে অনেক ইসরায়েলি নাগরিক সাইপ্রাসকে নিরাপদ বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করছেন। তারা সেখানে জমি কিনে বসতি গড়ে তুলছেন।
🔹 সাইপ্রাসের কোন এলাকাগুলোতে ইসরায়েলিরা বেশি জমি কিনছে?
ইসরায়েলিরা মূলত সাইপ্রাসের লারনাকা ও লিমাসোল এলাকার সেনাঘাঁটির আশপাশে বেশি জমি কিনছেন। এসব জায়গায় ইতিমধ্যে গেটেড কমিউনিটি ও জায়নবাদী স্কুল গড়ে উঠেছে।
🔹 সাইপ্রাসে ইসরায়েলিদের এই বসতি স্থাপন কি নতুন ফিলিস্তিন সংকট তৈরি করতে পারে?
স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলি নাগরিকরা যদি এইভাবে সংবেদনশীল এলাকায় বসতি স্থাপন অব্যাহত রাখে, তাহলে এটি ভবিষ্যতে একটি ‘নতুন ফিলিস্তিন সংকট’ তৈরি করতে পারে।
🔹 সাইপ্রাস সরকার এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে?
সাইপ্রাসের বামপন্থী দল আকেল পার্টি সংসদে দুটি বিল উত্থাপন করেছে, যাতে বিদেশিদের জমি কেনায় নিয়ন্ত্রণ আনা যায়। তবে সরকার এখনো বড় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
🔹 ইসরায়েলিরা কীভাবে এত সহজে সাইপ্রাসে জমি কিনছে?
তারা মূলত "গোল্ডেন ভিসা" কর্মসূচির সুযোগ নিচ্ছে, যেখানে বড় অংকের বিনিয়োগ বা সম্পত্তি কেনার মাধ্যমে নাগরিকত্ব বা আবাসিক সুবিধা পাওয়া যায়।
