Subscribe Us

মিটফোর্ডে যুবদল নেতার নেতৃত্বে নৃশংসতা: জনসমক্ষে পাথর দিয়ে সোহাগকে হত্যা

 

মিটফোর্ডে যুবদল নেতার নেতৃত্বে নৃশংসতা: জনসমক্ষে পাথর দিয়ে সোহাগকে হত্যা

আমর বাংলাদেশ ডেস্ক | ১১ জুলাই ২০২৫

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে জনসমক্ষে প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে (৪৩)। ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক যুবদল নেতা মাহমুদুল হাসান মহিনের বিরুদ্ধে। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া এই নির্মম হত্যাকাণ্ড এখন গোটা দেশে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।


🔴 কি ঘটেছিল সেদিন মিটফোর্ডে

বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালের সামনে দুই যুবক সোহাগের রক্তাক্ত, প্রায় বস্ত্রহীন দেহ টেনে নিয়ে আসে। এরপর একে একে কয়েকজন যুবক তাঁকে আঘাত করতে থাকে। কেউ চড় মারছে, কেউ লাফিয়ে পড়ছে বুকের ওপর, কেউবা মাথায় লাথি মারছে। রাস্তায় শত শত মানুষের সামনে চলে এই বর্বরতা, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরাও ছিলেন নিরব দর্শক।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন্স) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, “এমন বীভৎসতা আগে দেখিনি। এটি চিন্তারও বাইরে।”🧾 সিসিটিভিতে ধরা পড়ে বর্বরতা

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে—দুই যুবক সোহাগকে টেনে বের করছে, একজন গালে চড় মারছে, অন্যজন বুকের ওপর লাফাচ্ছে। আরেকজন এসে মাথায় লাথি মারছে। এ যেন রাস্তায় রক্তাক্ত মানবদেহ নয়, যেন পশুর ওপর হিংস্র উল্লাস। পুরো ঘটনাটি জনসমক্ষে ঘটে। হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরাও তখন নিষ্ক্রিয় ছিলেন।


🧠 ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব না কি রাজনৈতিক প্রভাব?

সোহাগ দীর্ঘদিন ধরে মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙারি ব্যবসা করতেন। পরিবারের ভাষ্য মতে, স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয়ধারী মহিন গত কয়েক মাস ধরে সোহাগের ব্যবসার অর্ধেক দাবি করে আসছিল। সোহাগ তাতে রাজি না হওয়ায় তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছিল।

সোহাগের ভাগ্নি সাদিয়া আক্তার মীম জানান, হত্যার একদিন আগে সোহাগের গুদামে গুলিও ছোড়া হয়েছিল। হত্যার দিন “মীমাংসা”র কথা বলে ডেকে নিয়ে সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।


🚔 গ্রেপ্তার ও মামলা 

ঘটনার পরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে গ্রেপ্তার করে। রবিনের কাছ থেকে একটি অবৈধ পিস্তল উদ্ধার হয়। সোহাগের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে মোট ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও ১৫-২০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।


🧒 সোহাগ রেখে গেছেন শোকাহত পরিবার

নিহত সোহাগের ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সোহানা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে এবং ১১ বছর বয়সী ছেলে সোহান পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। স্ত্রী লাকী বেগম বলেন, “লোকজন দেখছিল, কিন্তু কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। এই সমাজ কি আর মানুষের রইল?”


📉 হত্যা বাড়ছে রাজধানীতে

পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র চার মাসে ঢাকায় খুন হয়েছেন ১৩৬ জন। এই সংখ্যা গত ৪ বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।


🗣️ ডিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তার মন্তব্য

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেন,

“রক্তাক্ত লাশের ওপর যা হয়েছে, তা অবর্ণনীয়। সমাজে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়লে এমন ভয়াবহ ঘটনা বাড়তেই থাকবে।”


📢 প্রশ্নের মুখে আইন-শৃঙ্খলা ও রাজনীতি

এই ঘটনায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধ কতটা সংগঠিত হচ্ছে, তা আবারও প্রশ্ন তুলেছে নাগরিক সমাজে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা, প্রশাসনের দায়বদ্ধতা এবং রাজনৈতিক দৌরাত্ম্যের অবসান এখন সময়ের দাবি।


🔚 শেষ কথা

মিটফোর্ডে ঘটে যাওয়া এই নৃশংসতা শুধু একটি হত্যা নয়, এটি একটি সমাজব্যবস্থার চরম অবক্ষয়ের প্রতিচ্ছবি। সোহাগ হত্যার বিচার দ্রুত না হলে আগামীতে এমন ঘটনা আরো বাড়তে পারে। রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সমাজ—সবার জবাবদিহি প্রয়োজন এখন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!