আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষের পর নিহতের সংখ্যা নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি করেছে দুই দেশ। পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের হামলায় ২০০ জনের বেশি আফগান সৈন্য ও তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, আফগানিস্তানের দাবি—তাদের হামলায় ৫৮ পাকিস্তানি সেনা প্রাণ হারিয়েছেন।
শনিবার রাতভর এ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইং। রোববার (১২ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে তারা জানায়,“আফগানিস্তান সীমান্তে রাতভর সংঘর্ষে আমাদের ২৩ সেনা নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছেন।”এর আগে সকালে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ দাবি করেছিলেন, আফগান বাহিনীর হামলায় পাকিস্তানের ২৫টি সীমান্তপোস্ট দখল এবং ৫৮ সেনা নিহত হয়েছে।তবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাল্টা দাবি করে বলেছে,“বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, আমাদের পাল্টা হামলায় তালেবান ও অন্যান্য ২০০ জনের বেশি যোদ্ধা নিহত হয়েছে।”সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে আরও বলা হয়,“তালেবান বাহিনীর অবকাঠামো, সেনা পোস্ট, ক্যাম্প, হেডকোয়ার্টার এবং সন্ত্রাসী সাপোর্ট নেটওয়ার্কে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব হামলা মূলত সীমান্ত ও কৌশলগত অঞ্চলে চালানো হয়।”সংঘর্ষটি ঘটে আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী কুনার, বাজাউর, কুরম, চিত্রাল ও আঙ্গুর আড্ডা অঞ্চলে। এর আগে বৃহস্পতিবার পাকিস্তান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিমান হামলা চালায়, যেখানে তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) নেতাদের টার্গেট করা হয়। ওই হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই তালেবান বাহিনী সীমান্তে পাল্টা আক্রমণ চালায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।সংঘর্ষের পর দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। সৌদি আরব এক বিবৃতিতে জানায়,“পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে চলমান উত্তেজনা গভীর উদ্বেগের বিষয়। আমরা উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার আহ্বান জানাই।”সৌদি সরকার আরও জানায়, তারা উভয় দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় সমর্থন দেবে।অন্যদিকে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে,আমরা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে কূটনৈতিক পথে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছি। আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য কাতার প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।”দুই দেশের সীমান্তে এখনো চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। কুনার ও দির অঞ্চলে ভারী অস্ত্র ও ট্যাংক মোতায়েন রয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ জানিয়েছে, সীমান্তজুড়ে সামরিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে এবং সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
